logo
  • সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের জন্য ভালো সমাধান

অনলাইন ডেস্ক
  ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫২
ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু জবাবে মোদি বলেছিলেন, তিনি এটি পারবেন না।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আলজাজিরা’য় ড. ইউনূস এ কথা বলেছেন।

রবিবার ‘মুহাম্মদ ইউনূস : রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ?’ শিরোনামে এই সাক্ষাৎকার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটি কি বলা ঠিক যে শেখ হাসিনার পতনের পরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ পুরনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন—লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারে?

জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দুটি বিষয়, একটি জনগণের অধৈর্য নিয়ে, তা মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও। আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি। এই দিকেই আমরা যাচ্ছি। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর করো।’

অন্যদিকে রোহিঙ্গা একটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং এই লোকেরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি। আমাদের চিন্তা হলো, কিভাবে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায়, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে।’

সাক্ষাৎকারে বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্ন করেছিলেন আলজাজিরার উপস্থাপক। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কি না। তারা এখনো কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তাহলে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন সাক্ষাৎকারে উঠে আসে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, সেটা নয়। অন্যান্য দল আছে যারা বলতে পারে যে এই আইনের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান—শেখ হাসিনা দাবি করছেন, তিনি এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে বসে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার ভারতে তাঁর উপস্থিতিকে কিভাবে দেখছে?

জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ছিলেন। মোদির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। মোদিকে স্পষ্টভাবে বলেছি, যখন তিনি (হাসিনা) সেখানে আছেন, তখন যেন কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন। কারণ এটি আমাদের দেশে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করছে। তিনি (হাসিনা) বাংলাদেশের মানুষকে উসকে দেওয়ার জন্য বক্তব্য দিচ্ছেন, আর তার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে।’

সাংবাদিক জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী মোদি কী বলেছিলেন। উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি যদি ঠিকঠাক মনে করতে পারি, তিনি বলেছিলেন, ‘এটি (ভারত) এমন একটি দেশ, যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত, আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’”

প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি মনে করেন কি না, ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে, যেন দেশে ফিরে তাঁকে ন্যায়বিচারের সম্মুখীন না হতে হয়। তিনি ভারতের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন কি না? জবাবে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারত সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু তারা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখন আদালত তাঁকে নোটিশ পাঠাবেন এবং তখন দেখা যাবে কিভাবে তাঁকে ফিরিয়ে আনা যায়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আরও পড়ুন
চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন
একজন নাগরিকের অবশ্য প্রাপ্য, তার জন্ম সনদ
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশকে সহযোগিতার অঙ্গীকার জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারের
12