ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা

গত রাতে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও জাদুঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভাঙচুরের মধ্যে একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এরপর বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা একই সময় সুধা সদন নামক শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনেও ঘটে, যেখানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
ঘটনাটি ঘটানোর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে জুলাই গণ অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যার অংশ হিসেবে ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন আন্দোলনকারী রাত ৭টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে জমায়েত হতে শুরু করে। এ সময়, ইনকিলাব মঞ্চ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের উত্সাহিত করেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩২ নম্বর সড়কে একাধিক স্লোগান দেওয়া হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল "দিল্লি না ঢাকা... ঢাকা, ঢাকা!"।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর তিন তলা এবং ১৬ নম্বর নির্মাণাধীন পাঁচ তলা বাড়ি ভাঙতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও উত্তেজিত জনতার তীব্র প্রতিবাদে সেনাবাহিনী কিছু সময় পর এলাকা ছেড়ে চলে যায়। ছাত্র-জনতা একে একে সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে এবং ভাঙচুর চালায়। এই সময়ে অনেককে জানালার গ্রিল, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
রাত ১১টায়, পুরো এলাকার চারপাশে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দুটি ভবনেই আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত ১০:১৫ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুলডোজার ও ক্রেন আটকানোর চেষ্টা করলেও রাত ১১টায় প্রতিবাদকারীদের চাপে তারা বুলডোজার প্রবেশ করতে দেয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুটো ভবনই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ছাত্র-জনতা “স্বৈরাচারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও” স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
এছাড়া, খুলনায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি শেখ বাড়ি, চট্টগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, সিলেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক, এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায়, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং আন্দোলনকারীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জাগতিক /এস আই
মন্তব্য করুন