অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া চাঁদাবাজি ও মূল্যস্ফীতির সমাধান কঠিন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচিত সরকার আসার আগে দেশের মূল্যস্ফীতি এবং চাঁদাবাজির পুরোপুরি সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, চাঁদাবাজির কারণে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত একাধিক দল বর্তমানে দেশে সক্রিয় রয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অতীতের চাঁদাবাজির সাথে বর্তমানে যারা রাজনীতিতে জায়গা দখল করার চেষ্টা করছে, তাদের লোকজনও এই কার্যক্রমে জড়িত। স্থানীয় পর্যায়েও চাঁদাবাজি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এই সমস্যাগুলি পুরোপুরি সমাধান করা বেশ কঠিন, কারণ নির্বাচিত সরকারের মত তাদের রাজনৈতিক শক্তি নেই। তিনি জানান, রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তাদের হাতে রাজনৈতিক বাহিনী থাকে, যা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, "যখন আমরা দায়িত্ব নিলাম, তখন ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের অনিয়ম ছিল এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি ও ঋণখেলাপি ছিল।" মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটি একটি লিগ্যাসি প্রবলেম, যার মূল কারণ অতিরিক্ত টাকা ছাপানো এবং বড় বড় প্রকল্পগুলোর কারণে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, "অতীতের কয়েক বছরে প্রচুর টাকা ছাপানো হয়েছে, অনেক মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়েছে, যার কারণে সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।"
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, "খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও, নন-ফুড পণ্যের মূল্য কিছুটা কমেছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি, তবে চাঁদাবাজির কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।" তিনি বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন যে, সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে, যেমন, মহাস্থানগড় থেকে ঢাকায় আসা একটি ট্রাকের ভাড়া ৫ হাজার টাকা হলেও চাঁদাবাজির কারণে তা ১২ হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া, তিনি বলেছেন, "চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সীমিত ক্ষমতা রয়েছে এবং এক বা দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।" তিনি আরও জানান, বর্তমান সময়ে চাঁদাবাজির তিনটি প্রধান দল সক্রিয়, প্রথমত পুরোনো চাঁদাবাজরা, দ্বিতীয়ত রাজনৈতিকভাবে উদীয়মান নেতা এবং তৃতীয়ত স্থানীয় জনগণ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ এটি একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক দলগুলোর আসার পর এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে, কারণ তাদের ভোটের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
মন্তব্য করুন