বাংলাদেশে ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা: সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের নতুন বোঝা
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রবণতা সাধারণ মানুষের জন্য নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। গত এক বছরে ওষুধের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সরকার ভ্যাট ২.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করেছে। যদিও এই ভ্যাট বৃদ্ধির হার তেমন বেশি নয়, কিন্তু এর অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে ওষুধের খুচরা মূল্যে তেমন বড় প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভের মানসিকতার কারণে দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যয় আরও কঠিন হয়ে উঠছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও এই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোগীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে। তবে এই আশ্বাস সত্ত্বেও মেডিকেল ডিভাইস, বিশেষ করে হার্টের স্টেন্ট ও চোখের লেন্সের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর দাবিতে ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের বর্তমান চিত্র এক ধরনের লুটপাটের দিকে ইঙ্গিত করে। মাসের শুরুতেই অনেক ওষুধ কোম্পানি তাদের মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের মাধ্যমে ডাক্তারদের মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। এরপর ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্রে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে রোগীদের ওপর অযথা ওষুধের বোঝা বাড়ে।
এ প্রসঙ্গে প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, “মানুষ যে ওষুধ ৭ টাকায় কিনছে, তার উৎপাদন খরচ মাত্র ২০ পয়সা।” এ থেকেই বোঝা যায়, দেশে ওষুধ ব্যবসার নামে কী পরিমাণ লুটপাট চলছে।
১৯৮২ সালে প্রণীত ওষুধনীতি বাংলাদেশকে স্বল্পমূল্যে ওষুধ সরবরাহে অনেকটাই সফল করেছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন একটি ওষুধনীতি প্রণয়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেখানে ওষুধের উৎপাদন খরচ, ভোক্তা পর্যায়ের দাম এবং নীতিগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা খাতকে সুষ্ঠু ও নৈতিকভাবে পরিচালিত করতে জরুরি ভিত্তিতে নীতিমালা সংস্কার প্রয়োজন। এ খাতে অনিয়ম বন্ধ করতে সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসা ব্যয়ের অতিরিক্ত বোঝা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকারি নজরদারি এবং ওষুধ ব্যবসার সঠিক ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন।
জাগতিক /এস আই
মন্তব্য করুন