মার্চ ফর ইউনিটি
ঘোষণাপত্র ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই চান শিক্ষার্থীরা
মধ্য জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ শীর্ষক সমাবেশে সংগঠন দুটির নেতারা এই দাবি জানান। একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে জুলাই গণহত্যার বিচার, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ কয়েক দফা দাবি জানান। এ ছাড়া সেখানে আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়ন, খুন, গুম, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও লুটপাট এবং জুলাই গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে দু’দিন ধরে নানা আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে নানা তর্কবিতর্ক শুরু হলে সরকার ঘোষণা দেয়– অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সরকার দেবে। পরে গত সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক দল গঠনের পক্ষে শক্তিমত্তারও জানান দেওয়ার পাশাপাশি সংবিধান বাতিলের পক্ষে জনমত তৈরির চিন্তাও ছিল তাদের। সমাবেশের পর নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জানান, অনুষ্ঠানে অন্তত ৩০ হাজারের মতো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে ঢাকার বাইরে কয়েক স্থানে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের গাড়িবহরে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
বিকেল ৩টার দিকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে দলে দলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিপূর্ণ হয়ে যায় পুরো এলাকা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার সবচেয়ে বড় এই সমাবেশ মুখর ছিল স্লোগানে। বিকেল ৪টার দিকে গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। শুরুতে আন্দোলনে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান ছেলের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় তিনি দীর্ঘ পাঁচ মাসেও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
সমাবেশে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আগামীতে যে ঘোষণাপত্র আসবে, সেখানে প্রত্যেক শহীদের রক্তের ফোঁটার কথা উল্লেখ থাকতে হবে। যদি আমরা সে কথাগুলো না পাই, তাহলে বাংলার চব্বিশের বাঘের বাচ্চারা তা মেনে নেবে না। ঘোষণাপত্রে ৫৩ বছরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, তা সংস্কারের ইঙ্গিত থাকতে হবে। আমরা এক নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো শহীদ বা আহতের ওপর চোখ রাঙানো চলবে না। টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি হবে না।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা দ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে সক্রিয় হোন। সক্রিয় না হলে চব্বিশের বাঘের বাচ্চারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নেবে। আমাদের আগামীর কাজ হবে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে বিচার নিশ্চিত করা।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্র চায়। তারা সংস্কার চায়, নতুন সংবিধান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন সরকার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বিজয়।
তিনি বলেন, সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে হবে। আমাদের বলা হয়, নতুন সংবিধান করবে তার ম্যান্ডেট কোথায়? আমরা বলি, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারাই সংবিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন সংবিধান গঠন এবং আইনসভার সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন তারা। বাংলাদেশের বিচার, সংস্কারসহ নানা আকাঙ্ক্ষা আছে। ছাত্র-জনতা অবশ্যই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের সামনে খুনি ও তাদের দোসররা এখনও উন্মুক্ত চলাফেরা করছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখনও আমাদের বিভিন্ন জায়গা দেখে মুচকি হাসে। এই খুনিদের বিচার হতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শহীদদের রক্তের বিচার করতে না পারলে, আমরা কখনও নিজেদের ক্ষমা করতে পারব না। এ সময় তিনি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকারের পদক্ষেপের দাবি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতিতে যাবে। তবে এই নীতির সুযোগ নিয়ে যদি কেউ মাথায় উঠে বসতে চায়, আমরা তাকে মাথা থেকে মাটিতে ফেলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করব না। এ সময় তিনি ঢাকার বাইরে সমাবেশে আগতদের ওপর হামলার বিচার চান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এ সময় তিনি উপস্থিত জনতার সঙ্গে হাত তুলে জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের শপথ করেন। উপস্থিত নেতাকর্মীর উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মানুষের কাছে যাবেন। তাদের কথা শুনবেন এবং তাদের কথা তুলে আনবেন।
১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি জানান নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীনও। তা না হলে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।
জাগতিক/ আফরোজা
মন্তব্য করুন