পালপাড়ায় হামলা: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরে আতঙ্কের ছায়া
বগুড়া: গত ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বামুনিয়া পালপাড়ায় ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা। একদল সশস্ত্র ব্যক্তি পালপাড়ার অন্তত ১০টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করে। এই ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা লাল মোহন পাল (৫৫) জানান, ঘটনার সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁদের বাড়ির গেটে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৫০-২০০ জনের একদল লোক লাঠি, দেশীয় অস্ত্র এবং পেট্রোল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। প্রাণে বাঁচতে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যান।
লাল মোহন বলেন, আমার স্যানেটারি রিং স্ল্যাব বসানোর কাজ দিয়ে সংসার চলে। রাজনীতি বুঝি না। সেদিন কোনো রকমে প্রাণটা রক্ষা করেছি, কিন্তু আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।
পালপাড়া গ্রামের ৬৫টি পরিবার মাটির তৈজসপত্র ও প্রতিমা তৈরি করে জীবন চালায়। কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা কিংবা কৃষিকাজ করেন। হামলায় বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি খড়ের গাদা ও ভ্যান গাড়িও আগুনে পুড়ে গেছে। এখন গ্রামের প্রতিটি ঘরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা অক্ষয় পাল বলেন, সারা দিন খাটুনি করে বাড়ি ফিরি। কিন্তু এখন রাতে ঘুম হয় না। লাঠি হাতে দল বেঁধে পাহারা দিতে হয়। সন্ধ্যা নামলেই ভয় বেড়ে যায়।
হামলাকারীরা স্থানীয় ব্যবসায়ী আপন চন্দ্র পালের দোকানে হামলা চালিয়ে সাত লাখ টাকার মালামাল ও মেশিন লুট করে। স্বপন চন্দ্র পাল এবং শ্যামল চন্দ্র পালের মুদিদোকান থেকেও কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে।
রিপন পালের স্ত্রী বিউটি রানী পাল বলেন, আমার বিয়েতে বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া তিন ভরি সোনার গয়না ছিল। হামলাকারীরা সেগুলোসহ টাকাপয়সা লুট করেছে।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিক ইকবাল জানান, পুলিশ বাহিনী নিজেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল, তাই দ্রুত পালপাড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সেখানে পুলিশি টহল বাড়িয়েছি।
পালপাড়ার বাসিন্দারা হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। প্রশান্ত চন্দ্র পাল বলেন, হামলাকারীদের সবাই পরিচিত। তারা সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে।
হামলার পর থেকে পালপাড়ার পুরুষেরা রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছেন। তবে আতঙ্কে অনেক নারী-শিশু ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। বৃদ্ধা সুনীতি বালা বলেন, আমাদের পেট চলে মাটি পোড়ানোর উপার্জনে। সরকারে কে আছে, কে নেই, সেটা জানার দরকার পড়ে না। কিন্তু কেন আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিল, বুঝতে পারি না।
এই হামলার ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
জাগতিক/রাজ
মন্তব্য করুন