ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে সেনা পাঠানোর কথা প্রথমবারের মত স্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে সেনা পাঠানোর কথা প্রথমবারের মত স্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিম জং উনের নির্দেশে উত্তর কোরিয়ার সেনারা কুর্স্ক সীমান্ত এলাকা ‘সম্পূর্ণ মুক্ত’ করতে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
বিবিসি লিখেছে, রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গিরাসিমভ রুশ বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ‘বীরত্বের’ প্রশংসা করার কয়েকদিন পর পিয়ংইয়ং যুদ্ধে নিজেদের সেনার উপস্থিতির কথা জানান দিল। আর গিরাসিমভের ওই প্রশংসার মধ্যে মস্কো প্রথমবারের মত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
তিনি দাবি করেন, মস্কো দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে; যদিও এই দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেইন। দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, পিয়ংইয়ং গত বছর কুর্স্কে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে।
কেসিএনএ জানিয়েছে, পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিম বলেছেন, “যারা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছেন তারা সবাই বীর এবং মাতৃভূমির সম্মানের প্রতিনিধি।”
কেসিএনএ লিখেছে, কুর্স্কে ‘মিত্রতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ’ দেখিয়েছে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া। ‘রক্ত দিয়ে প্রমাণিত বন্ধুত্ব’ সম্পর্ক সম্প্রসারণে ‘সব উপায়ে’ ব্যাপক অবদান রাখবে।
কুর্স্কে মিশন শেষ হওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার সেনাদের কী হবে তা জানায়নি কেসিএনএ।
খবরে বলা হচ্ছে, কিম ও পুতিনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর অক্টোবরে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের খবর প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার বিষয় রয়েছে, যেখানে ‘আগ্রাসন’ মোকাবেলার প্রশ্নে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম একে অপরের পাশে থাকতে সম্মত হয়েছেন।
গত জানুয়ারিতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো ১১ হাজার সেনার মধ্যে অন্তত এক হাজার সেনা আগের তিন মাসে নিহত হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। উত্তর কোরিয়া থেকে যেসব সেনা পাঠানো হয়, তারা স্টর্ম কর্পস নামে একটি এলিট ইউনিটের সদস্য। তারা আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতার জন্য ‘প্রস্তুত নয়’ বলে খবরে বলা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক ট্যাংক কমান্ডার কর্নেল হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন এ বছরের শুরুতে বলেছিলেন, “এরা রুশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন খুব কম প্রশিক্ষিত সেনা, যাদের বোঝে না ওই কর্মকর্তারা।”
এরপরও ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ওলেকজান্ডার সিরস্কি এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, সামনের সারিতে থাকা ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা।
তিনি ইউক্রেনের টিএসএন টাইজডেন নিউজ প্রোগ্রামকে বলেছিলেন, “ওদের সংখ্যা অনেক। অতি উদ্যমী ও সুপ্রস্তুত অতিরিক্ত ১১-১২ হাজার সেনা আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা সোভিয়েত কৌশলের ভিত্তিতে কাজ করে। তারা সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্বের ওপর ভরসা করে।”
মন্তব্য করুন