যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত: বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রভাবের আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করেছে এবং নতুন কোনো অর্থ সহায়তা অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বৈশ্বিক পর্যায়ে বেশ কিছু দেশের উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকলে বাংলাদেশের বাজেট সহায়তা ও উন্নয়ন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বল্পমেয়াদে এর তেমন প্রভাব না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং দেশটির কাছে বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা স্থগিত স্বল্প সময়ের জন্য হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অনুদানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে গেলে বাজেট সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বব্যাপী প্রযোজ্য করেছে এবং এটি তিন মাস পর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এখন থেকেই কূটনৈতিক আলোচনা ও লবিং জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাবেক চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত সরাসরি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলবে না, তবে দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্প ও বাজেট পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
ইউএসএইড ইতোমধ্যে তাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের চুক্তি, অনুদান ও প্রকল্প কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে পর্যালোচনা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও মানবিক সাহায্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ইউএসএইডের বিভিন্ন কর্মসূচি সহায়ক। যদিও জরুরি খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কম পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার জন্য ৬৪০০ কোটি ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছিল, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। তবে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অনেক ক্ষেত্রে মানবিক সহায়তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব বহন করে। যদিও ইসরায়েল ও মিসরের জন্য সামরিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, অন্যান্য দেশের জন্য এই সহায়তা স্থগিত রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারকে এখন থেকেই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সহায়তা পুনরায় চালু করা যায় এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যাহত না হয়।
মন্তব্য করুন