চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের নতুন এআই ‘আর-১’ নিয়ে তোলপাড়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছে চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক। তাদের নতুন ‘আর-১’ মডেল প্রযুক্তি বাজারে নতুন এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, যা গুগলের জেমিনি, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ও অ্যানথ্রপিকের ক্লডের মতো জনপ্রিয় এআই মডেলগুলোকেও পেছনে ফেলার দাবি করছে।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি অ্যাপল স্টোরে উন্মুক্ত হওয়ার পরই ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপে পরিণত হয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অপ্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা যুক্তরাষ্ট্রের এআই বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপসিকের সাফল্যের মূল কারণ হলো এর অত্যন্ত স্বল্প খরচে উন্নতমানের এআই সেবা। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের ‘আর-১’ মডেল তৈরিতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, যেখানে ওপেনএআই বা গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এআই মডেল তৈরিতে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং নিজেই একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। তিনি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার ৫০ হাজারের বেশি চিপ সংগ্রহ করে কম খরচে শক্তিশালী এআই মডেল তৈরি করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কম দামি ও সহজলভ্য চিপ ব্যবহার করেও কীভাবে উন্নত এআই তৈরি করা যায়, তা ডিপসিক প্রমাণ করে দিয়েছে।
ডিপসিকের সাফল্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া। ২৭ জানুয়ারি মাত্র একদিনে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ৬০ হাজার কোটি ডলার কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কম খরচে উন্নতমানের এআই মডেল তৈরি করা সম্ভব হলে, মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজার দখলের ক্ষমতা কমে যাবে।
ডিপসিকের এআই মূলত চ্যাটজিপিটির মতোই একটি উন্নত এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট। ব্যবহারকারীরা এটি দিয়ে বিভিন্ন তথ্য খুঁজতে, লেখার মান উন্নত করতে ও দৈনন্দিন কাজে সহায়তা নিতে পারেন। তবে, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে এটি অপারগ। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসির এক সাংবাদিক ‘তিয়ানানমেন স্কয়ারের ১৯৮৯ সালের ঘটনার’ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ডিপসিক উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিকের উত্থান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। অনেকেই মনে করছেন, চীন এখন আর শুধু এআই প্রযুক্তির অনুসারী নয়, বরং নতুন উদ্ভাবনের পথিকৃৎ হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কি ডিপসিকের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে, নাকি বিশ্ব এআই বাজারে নতুন শক্তি হয়ে উঠবে চীন? সেটাই এখন দেখার বিষয়!
জাগতিক /এস আই
মন্তব্য করুন