logo
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা চাপে, বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা

অনলাইন ডেস্ক
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:০৮

বর্তমানে ব্যবসায়ীরা পরিচালন ব্যয়ের চাপে দিশেহারা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং উৎপাদন খরচ বাড়ায় পণ্য ও সেবা বিক্রিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই অবস্থায় নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে উদ্যোক্তারা সংকটাপন্ন ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।

রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করে বর্তমান সমস্যা তুলে ধরেন।

কঠিন বাস্তবতার চিত্র

বিনিয়োগবান্ধব হতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। বিনিয়োগে জটিলতা চরমে—একজন উদ্যোক্তাকে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৪১টি ছাড়পত্র নিতে হয়। এর মধ্যেই গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ঋণের উচ্চ সুদহার এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ব্যবসায়ীদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কমে গেছে। এলসি জটিলতায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করা যাচ্ছে না। কর বাড়ানোর চাপ এবং গ্যাসের উচ্চ মূল্য আমাদের ব্যবসা পরিচালনা অসম্ভব করে তুলেছে।”

বিনিয়োগে ভাটা

২০২১ সাল থেকে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
• ২০২১ সালে এক হাজার ৩৩৪ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল।
• ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ৮৯৭ কোটি ডলারে।
• চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৪৭ কোটি ডলারে নেমেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮.৮ শতাংশ কম।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব

ব্যবসায়ীরা বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন:
1. ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার নীতিমালা (এক্সিট পলিসি): সংকটাপন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নীতিমালা চালু করা।
2. নগদ সহায়তা ত্বরান্বিত করা: রপ্তানিমুখী শিল্পে নগদ সহায়তা দুই-তিন মাসে প্রদানের প্রস্তাব।
3. ঋণের শর্ত শিথিল করা: ঋণখেলাপির জন্য সময়সীমা ছয় মাসে উন্নীত করা।
4. সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট বৃদ্ধি: ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা।
5. রুগ্ণ শিল্পের ঋণ পুনঃতফসিল: ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১৫ বছরের কিস্তি সুবিধা।

গভর্নরের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি কমানো। জুন নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে এবং রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা

বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা না গেলে নতুন বিনিয়োগ সম্ভব নয়। তারা বিদ্যুত ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, করপোরেট বন্ডের উন্নয়ন এবং সিএমএসই খাতের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়