logo
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

`শীতে কাবু মানুষ'

উত্তর অঞ্চলে দিনেও সূর্যের দেখা মিলছে না

আপন সরকার, রংপুর

  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০
দেশের উত্তরের হিমালয়ের নিকটবর্তী দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসেছে। এছাড়া রংপুর ও রাজশাহীতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও কুয়াশায় কাবু জনজীবন।

বাংলা বর্ষপঞ্জির অগ্রহায়ণে শেষ সপ্তাহে উত্তরের সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসেছে। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এসব জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। হিমেল বাতাসে অনুভব হচ্ছে বরফের শীত। হাড় কাঁপানো এই শীতের সঙ্গে বেড়েছে ঘন কুয়াশা।

রাজশাহীতেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও কুয়াশায় শীত জেঁকে বসেছে। আজ সোমবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা দেখা দেয়। বৃষ্টির মতো কুয়াশাও ঝরেছে। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, আজ সারা দিন আবহাওয়ার পরিস্থিতি এমনই থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ও বিকেলেও তাপমাত্রা কম থাকবে।

গত দু’দিন ধরে উত্তরের এসব জেলায় নিয়মিত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো করে পড়ছে শিশির। তাপমাত্রা কমে আসায় কনকনে শীতের প্রকোপে জর্জরিত হয়ে পড়েছে এ জেলার মানুষ। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলো খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার তেঁতুলিয়া অফিস ।

অন্যদিকে, কুড়িগ্রামে আজ বুধবার দুপুর ২টার পরেও দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজনের জীবনযাত্রা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করাও। চিলমারী নৌবন্দর ও যাত্রাপুর নৌঘাট থেকে সকাল ৮টার নৌযানগুলো ২ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে।

ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। বেলা গড়িয়ে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় ও হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডার অনুভূতি থাকছে। ফলে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও প্রচণ্ড শীতে জেলাবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে নদীর চর-দ্বীপ চরের মানুষজন বেশি কষ্ট পাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আকাশে মেঘ ও ঘন কুয়াশার বলয় থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না, যা আরও দুই-একদিন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাপমাত্রা আরও নিম্নগামী হবে। চলতি মাসে ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

যাত্রাপুরের পোড়ার চরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, দুপুর ২টা পর হইল এল্যাও সূর্যের দেখা নাই। মানষের বাড়িত কাম করি, আজ ঠান্ডার জন্য নদী পারে হবার পাই নাই।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ঠান্ডা তো আজ কয়েকদিন থাকি খুব পড়তেছে। আমার এলাকার মানুষজনক সব থেকে হতদরিদ্র। এনা দিনমজুরী করে চলে, পরিষদ থেকে কোনো কম্বল পাই নাই।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, শীতের জন্য এ বছর নতুন করে কম্বল বা অর্থ এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়নি। আমাদের কাছে ৯ উপজেলার জন্য ১৮০০ কম্বল মজুত রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ বলেন, রোববারের চেয়ে তাপমাত্রা আরও কমেছে। তাপমাত্রা কমে গত ১০ ডিগ্রির ঘরে এসেছে। সোমবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। শনিবার রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কৃষক মাজহার মিয়া জানান, ভাই খুবই ঠান্ডা। রাত-ভোর পর্যন্ত বরফের মতো লাগে। এতো ঠান্ডা, কাজ কাম করা খুবই কঠিন হয়ে উঠে। ভোরে পালং শাক, লাফা শাক ও লাউ শাক তুলতে এসেছি। ধরা যাচ্ছে না, বরফের মতো মনে হচ্ছে। হাত অবশ হয়ে আসে। কিন্তু কি করবো, টাটকা সবজি বাজারে নিতেই কাজ করতে হচ্ছে।

জাগতিক/ আফরোজা


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়